তেতুলের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা

আমরা প্রায় সবাই অনেকেই তেতুল বিভিন্নভাবে খেয়ে থাকি যেমন ফুচকার সাথে টপ হিসাবে, আচার করে, রান্না করে অথবা  অনেকেই  মুখের স্বাদের জন্য কাঁচা খেয়ে থাকি।  কিন্তু  আমরা  তেতুলের  যে  উপকারী বিষয়টি আছে সেটি ঠিকমত ব্যবহার করি না।

তেতুলের-বিচির-উপকারিতা-ও-অপকারিতা

তেতুলে যতগুলো উপকারী বিষয় আছে তার থেকে সবথেকে বেশি কার্যকরী হচ্ছে তেতুলের বীজ অথবা বিচি। এই বিচি বিভিন্ন ওষুধগুণ সম্পন্ন যা আমাদের অনেকের অজানা। আমরা তেতুল খেয়ে তার বিচি গুলো ফেলে দেই আর এই তেতুলের বীচে এমন কি উপাদান আছে যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এই বিষয়ে আজকে আলোচনা করা হবে।

পেজ সূচিপত্রঃ তেতুলের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা


তেতুলের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা

আমরা তেঁতুল অনেকেই একেক জন একেক রকম ভাবে ব্যবহার করে থাকি। কেউ মুখের স্বাদের জন্য খেয়ে থাকি আবার ফুচকা, মুখরোচক খাবারের টক ব্যবহার করে খেয়ে থাকি,আবার আমরা আচার বানিয়ে খেয়ে থাকি। কাঁচা তেঁতুল বা পাকা তেতুলে অনেক পুষ্টি উপাদান আছে আমরা তা অনেকেই জানি। কিন্তু এছাড়া যে আরেকটি উপাদান আছে যেটি আমরা অনেকেই জানিনা। আর সেটিতে তেতুলের থেকে অনেক বেশি পুষ্টি উপাদান রয়েছে যেটি আমরা ফেলে দেই আর সেই উপাদানটির নাম হচ্ছে তেতুলের বিচি।

তেতুলের বিচি বিভিন্ন চিকিৎসার ক্ষেত্রে, ত্বক সুস্থ এবং উজ্জ্বল রাখতে, ব্রণের সমস্যা দূর করতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, পেপটি আলসার, কোষ্ঠকাঠিন্য, লিভার সুস্থ এবং লিভারের চর্বি গলাতে ইত্যাদি সাহায্য করে। আপনি যদি নিয়ম মেনে ঠিকমতো এই তেতুলের বিচি রোদে শুকিয়ে পাউডার করে ১৫ দিন পর পর পানির সাথে মিশিয়ে এক গ্লাস খেতে পারেন তাহলে  আপনি বিভিন্ন সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারবেন।

তবে এই তেঁতুলের বিচি যেমন উপকারিতা আছে পাশাপাশি কিন্তু অতিরিক্ত সেবন করলে মারাত্মক অপকারিতা রয়েছে। এজন্য আপনাকে সঠিক নিয়মগুলো জানতে হবে। আপনি যদি এই তেঁতুলের বিচির পাউডার মাত্রা অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন তাহলে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হতে পারে। এজন্য আপনাকে খাওয়ার পরিমাণটি জানতে হবে যা আমরা আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব। তো চলুন প্রথমে আমরা জেনে নেই তেতুলের বিচি যে সকল উপকারিতা রয়েছে।

তেতুলের বিচির পাউডার খাওয়ার উপকারিতা


  • যৌনশক্তি বৃদ্ধি করতেঃ যে সকল ভাই এবং আপুরা বিভিন্ন ধরনের যৌনশক্তি সমস্যায় ভুগছেন তারা তেতুলের বীজ ব্যবহার করতে পারেন। এটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে তেতুলের বীজ যৌনশক্তি এবং শারীরিক শক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেঃ কোষ্ঠকাঠিন্য হলে তেতুলের বীজ পাউডারটি আপনি ব্যবহার করতে পারেন। তেতুলের বিচিতে রয়েছে টারটারিক অ্যাসিড পটাশিয়াম এবং ম্যালিক এসিড এসব উপাদানগুলো কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
  • চুল মজবুত করতেঃ বর্তমানে কম বয়সে অনেক ছেলে মেয়ের চুল পড়ার সমস্যা হচ্ছে এবং মাথার ত্বক টাক হয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় আপনি তেঁতুলের বিচির পাউডার দিয়ে হেয়ার প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার চুল পড়া অনেকটাই রোদ হয়ে যাবে। চুলের খুব সৃজনীত সমস্যা চুলের গোড়ায় শিবোরেসিস নতুন চুল গজাতে এবং খুশকি দূর করতে সাহায্য করে এজন্য আপনাকে প্রথমে তেতুলের বিচির পাউডারের সাথে অ্যালোভেরা জেল লেবুর রস ও টক দই মিশিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করে চুলের গোড়ায় আলতোভাবে লাগাতে হবে। এই হেয়ার প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহার করার ফলে আপনার চুলকে ঘন লম্বা ও খুশকি মুক্ত করবে।
  • ত্বক সুস্থঃ তেতুলের বিচি ত্বকের ক্ষতিকারক আরোটা ভায়োলেট থেকে সুরক্ষার প্রদান করে ত্বককে সুস্থ রাখে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে যা গবেষণা এটি প্রমাণিত।
  • মাসিক জনিত সমস্যাঃ যে সকল মেয়েরা অনিয়মিত মাসিক জনিত সমস্যায় ভুগছেন তারা তেঁতুলের বিচির পাউডার সেবন করতে পারেন তাহলে এটি আপনার মাসিকের সমস্ত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে এবং নিয়মিত মাসিক হবে।
  • চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহারঃ তেতুলের বিচি বিভিন্ন ওষুধের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করা হয়। যেমন আয়ুর্বেদিক, ইউনানী, হোমিওপ্যাথি এলোপ্যাথিক।
  • মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়াতেঃ আপনি যদি মস্তিষ্কের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগে থাকেন কিংবা কোন কিছু বেশিদিন মনে না থাকে তাহলে আপনি তেতুলের বীচের পাউডারটি ব্যবহার করতে পারেন। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ফলিক এসিড, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন সি, সেলেনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, জিং, কপার যা মস্তিষ্কের টক্সিন বের করে দিতে বিশেষভাবে কাজ করে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
  • চোখ সুস্থ রাখতেঃ চোখ সুস্থ রাখার জন্য তেঁতুলের  বীজ ওষুধগুন সম্পন্ন। চোখের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন চোখের ছানি পড়া, চোখ থেকে পানি পড়া, চোখের শুষ্ক ভাব দূর করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে তেতুলের বীজ থেকে বিভিন্ন ধরনের চোখের ড্রপ ব্যবহার করা হয় যা চোখের জন্য খুবই উপকারী। যারা এরকম সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত তেতুলের বীজের পাউডার সেবন করে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতেঃ তেঁতুলের বিচির পাউডার তৈরি করে নিয়মিত সেবন করলে অনেকটাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এতে রয়েছে এঞ্জাম আলফা এমাইলেজ যা রক্তের শতকরা মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে কার্বোহাইড্রেট শোষণ করে এবং ধীর ও ইনসুলিন বৃদ্ধি করে।
  • মশার কয়েল তৈরিতেঃ আমরা অনেকেই মশা তাড়ানোর জন্য কয়েল ব্যবহার করে থাকি কিন্তু এটা আমাদের অনেকেরই অজানা যে মশার কয়েল তৈরিতে তেতুলের বীজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে কাঁচামাল হিসাবে।
  • দাঁতের যত্নে তেঁতুলের বীজঃ বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের দাঁতের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। কিন্তু বর্তমানে আমরা দাঁতে ঠিকঠাক মত যত্ন না নেওয়ার ফলে আমাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। আপনি যদি এখন থেকেই এই তেঁতুলের বীজ সেবন করতে পারেন বা আপনার যদি দাঁতের কোন সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে আপনি তেতুলের বীচের পাউডার নিয়মমাফিক ব্যবহার করলে এর সমস্ত রোগ থেকে দূর হতে পারবেন।
তেতুলের-বিচির-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
  • ত্বক উজ্জ্বল করতেঃ তেতুলের বিচিতে রয়েছে হাইড্রোক্সাইড যা ত্বকের এক্সপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে ত্বকের মৃত কোষ গুলো উঠে যায় এবং ত্বক উজ্জ্বল দেখায়।
  • বমি ভাব দূর করতেঃ অতিরিক্ত জার্নি বা গর্ভাবস্থায় বেশি পরিমাণে বমির সমস্যা থাকলে তেতুলের বিচি অনেক বেশি কার্যকরী। এতে রয়েছে অধিক পরিমাণের অ্যাসিড যা বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
  • ত্বকের ব্রনের সমস্যা দূর করতেঃ তেঁতুলের বিচি ভালোভাবে পরিষ্কার করে রোদে শুকানোর পর এটিকে পাউডার তৈরি করে সামান্য মধু ব্যবহার করে ত্বকে ব্যবহার করলে ব্রণের সমস্যার সমাধান হয়। পাশাপাশি ব্রণ হওয়ার ফলে যে কালো দাগ গুলো হয় সেগুলো দূর হয়ে যায়।
  • রুচি বৃদ্ধি করতেঃ যাদের রুচির সমস্যা আছে ভাত বা বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে পারেন না তারা নিয়মিত তেতুলের বীজের পাউডার খেতে পারেন এতে আপনার রুচির বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।
  • মহিলাদের ডিম্বানো উৎপাদনঃ যে সকল আপুদের ডিম্বানু উৎপাদন অনেক পরিমাণে কম হয়ে থাকে তারা এই তেঁতুলের বিচির পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। যদি আপনি নিয়মমাফিক এই পাউডার সেবন করতে পারেন তাহলে আশা করা যায় আপনার এই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। 
  • পেপটিক আলসারঃ তেতুলের বিচি পেট্রিক আলসার রোধ করতে সাহায্য করে। এটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে তেতুলের বিচি পেপটিক আলসার কমাতে অনেক ভালো কাজ করে থাকে। এতে উপস্থিত পলিফিলিক কম্পাউন্ড এবং পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধান করতে কাজ করে।
  • স্বপ্নদোষ রোধঃ যে সকল পুরুষদের অতিরিক্ত মাত্রায় স্বপ্নদোষ হয় তারা তেতুলের বিচি বা এর পাউডার নিয়মিত সেবন করার ফলে স্বপ্নদোষ থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে পারেন। এজন্য আপনাকে নিয়ম মেনে নিয়মিত তেতুলের বিচির পাউডার সেবন করে যেতে হবে।
  • ইমিউনিটি রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি করতেঃ যাদের রোগ প্রতিরোধ কমিউনিটির অভাব তারা তেতুলের বিচির পাউডারটি নিয়মিত খেলে ইমিউনিটি ঘাটতি খুব সহজেই পূরণ করতে পারবেন।
  • কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতেঃ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে তেতুলের বিচি অনেক ভালো ওষুধগুন সম্পন্ন। এর উচ্চমাত্রা পটাশিয়াম থাকার ফলে শরীর খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে দেই যা কোলেস্টেরল মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
  • দ্রুত বীর্যপাত রোধ করতেঃ যাদের অতিরিক্ত দ্রুত বীর্যপাত হয়ে যায় তারা তেঁতুলের বীজের পাউডারটি সেবন করতে পারেন। দ্রুত বীর্যপাত রোধে তেঁতুলের পাউডার অনেক ভালো ভূমিকা রাখে যা বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত।
  • জরায়ুর সমস্যা দূর করতেঃ মহিলাদের জরায়ুতে বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন, জরায়ুর শক্তি বর্ধন যা আপনি তেতুলের বিচি নিয়মিত সেভেন এর ফলে এগুলো দূর করতে পারেন।
  • লিভার সুস্থ রাখতেঃ অনেকেই লিভার নিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগেন অনেক টাকা খরচ করে লিভার অপারেশন করে থাকেন অনেকের আবার লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে যায়। যদি আপনি আপনার লিবার্টিকে সুস্থ রাখতে চান তাহলে আপনি এখন থেকেই নিয়মিত তেতুলের বীজের পাউডার সেবন করতে পারেন। এছাড়াও তেতুলের পাতার রস লিভারের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

তেতুলের বিচির পাউডার খাওয়ার অপকারিতা


এতক্ষণ আমরা তেতুলের বিচির উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম। তেতুলের বিচির পাউডারের উপকারিতা পাশাপাশি বেশ কিছু অপকারিতা আছে। আপনি যদি তেতুলের  বিচি নিয়ম না মেনে সেবন করতে থাকেন মাত্রা অতিরিক্ত ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আপনি বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন। কি কি সমস্যায় পড়তে পারেন এখন আমরা সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব।

  • তেতুলের বিচি অতিরিক্ত মাত্রায় সেবন করলে আপনার শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে বিভিন্ন রোগ হতে পারে।
  • তেতুলের বিচিতে সেহেতু বিভিন্ন ধরনের এসিড রয়েছে আপনার যদি গ্যাস্ট্রিক থেকে থাকে তাহলে সমস্যা হতে পারে।
  • আপনার যদি বিভিন্ন এলার্জি তে ভোগে থাকেন তাহলে তেঁতুলের বীজ এড়িয়ে চলুন কেননা আপনার যদি এলার্জি থাকে আর আপনি এটি সেবন করতে থাকেন তাহলে আপনার সেই এলার্জিকে আরো বেশি পরিমাণে বাড়িয়ে দিতে পারে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ হতে পারে।
  • তেঁতুলের বীচে পাউডার মাত্রা অতিরিক্ত সেবন করলে পিত্তথলিতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে তেতুলের বীজ সেবন করলে জন্ডিসের মতন সমস্যা হতে পারে।
  • গর্ভবতী মহিলাদের তেঁতুলের বীজ সেবন করলে অনেক ধরনের সমস্যার সমাধান হতে হবে এজন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।
  • তেতুলের বীজের পাউডার ওজন ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে যদি আপনি অতিরিক্ত মাত্রায় খান তাহলে আপনার ওজন অনেক বেশি কমে যেতে পারে। 

তেঁতুলের বিচির পাউডার তৈরি করার নিয়ম


প্রথমে পাকা তেতুল খাওয়ার পর যে বিচি টি থাকবে সেটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। ভালোভাবে পরিষ্কার হয়ে গেলে দুই থেকে তিন দিন টানা রোধে শুকাতে হবে। ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে বিচির উপরের যে কালো অংশটি সেটি সহ খুব সহজেই উঠে আসবে এবং যে সাদা অংশটি বেরিয়ে আসবে সেটিকে আবারও দুই তিন দিনের মতো টানা রোদে শুকাতে দিতে হবে। ভালোভাবে শুকা হয়ে গেলে ব্লেন্ডারে বীজগুলোকে ব্লেন্ড করে ফেলতে হবে। এই ভাবেই আপনি ঘরোয়া পদ্ধতিতে তেতুলের বিচির পাউডার তৈরি করতে পারেন খুব সহজেই।

তেতুলের বিচির পাউডার খাওয়ার নিয়ম


এতক্ষণ আমরা জানলাম তেতুলের বিচি ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে তৈরি করতে পারবেন। এখন আমরা এই তেতুলের বিচি কিভাবে সঠিকভাবে খাবেন কতটুকু খাবেন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি যদি নিয়মমাফিক সঠিক পদ্ধতিতে তেতুলের বিচি বা পাউডার খেতে চান এবং কোন সমস্যায় পরতে না চান তাহলে অবশ্যই নিচে নিয়মগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

  • ২-৩ চা চামচ তেতুলের বিচির পাউডার হাফ গ্লাস পানিতে রাতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে উঠে ভিজানো  পাউডার ছাকনী দিয়ে পানিটা ছেঁকে নিন যেন তলানি অংশটুকু আলাদা হয়ে যায়। এরপর শুধু পানি টুকু খাবেন এতে আপনার পছন্দমত  গরম পানি, লেবুর রস, মধু মিস করে খেতে পারেন।
  • আপনি যদি চান তাহলে শুধু তেতুলের বিচির পাউডার খাবেন তাহলে খেতে পারেন এজন্য আপনাকে খাওয়ার পর এক গ্লাস পানি খেয়ে নিতে হবে।
তেতুলের-বিচির-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
  • ডাক্তারদের মতে তেতুলের বীজের পাউডার তিন থেকে সাত গ্রামের বেশি খাওয়া উচিত নয়। যদি অতিরিক্ত মাত্রায় খেয়ে ফেলেন তাহলে উপকারের জায়গায় ক্ষতি হয়ে যাবে।
  • আপনি চাইলে তেঁতুলের বিচির দুধের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন তবে এতে সামান্য পরিমাণে মধু মিশিয়ে নিবেন।

তেতুলের বিচির পুষ্টি উপাদান


এতক্ষণ তো তেতুলের বিচির উপকারিতা অপকারিতা কিভাবে পাউডার তৈরি করবেন কিভাবে খাবেন কতটুকু খাবেন সবকিছু নিয়ে আলোচনা করলাম এখন আপনাদেরকে জানাবো এই তেতুলের বিচিতে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী।

১০০ গ্রাম তেতুলের বিচিতে রয়েছে


পুষ্টি উপাদান পরিমাণ
মেথাইনিন ০.০১৪ গ্রাম
লাইসিন ০.১৩৯
ট্রিপ্টোফ্যান ০.০১৮ গ্রাম
প্রোটিন ২.৮ গ্রাম
বহুঅসুসিক্ত ০.০৫৯ গ্রাম
এককঅসুসিক্ত ০.১৮১ গ্রাম
সুসিক্ত ০.২৭২ গ্রাম
স্নেহ পদার্থ ০.৬ গ্রাম
খাদ্য আশঁ ৫.১ পরিমাণ
চিনি ৫৭.৪ গ্রাম
শক‍রা ৬২.৫ গ্রাম
শক্তি ২৩৯ ক্যালোরি

গর্ভাবস্থায়  তেতুল খাওয়া যাবে


হ্যাঁ অবশ্যই খাওয়া যাবে তবে সেটা সীমিত পরিসরে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে। তবে যদি অতিরিক্ত মাত্রায় তেতুল খাওয়া হয় তাহলে সমস্যা হতে পারে। যদি গর্ভবতী মহিলা নিয়ম মেনে পরিমান মত  তেতুল  খেতে পারে তাহলে অনেক উপকারী হবে। গর্ভবতী মহিলা যদি নিয়মমাফিক তেতুল খেতে পারেন তাহলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের মতন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে। তেতুলে রয়েছে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান যেটা আপনার শরীরের জন্য খুবই উপকারী এবং আপনাকে সুস্থ রাখবে।

তেতুলের বিচি সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন উত্তর


এখানে আমি জানানোর চেষ্টা করব আপনারা অনেকে তেতুলের বিচির সম্পর্কে যে প্রশ্নগুলো করে থাকেন সেগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।

  • প্রশ্নঃ তেতুলের বীজ কখন খেতে হয়?
  • উত্তরঃ তেতুলের বিচি খাওয়ার সঠিক সময় হল সকাল বেলা। আপনি বিকেল বেলাও খেতে পারেন তবে রাতের বেলা খাওয়া যাবেনা। যেহেতু তেতুলের বীজ ভারী সেহেতু হজম হতে সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও পেট ফোলা, পেট ব্যথা, ঘুম নষ্ট হতে পারে। তবে আপনি এটি সকালে কিংবা বিকালে কখনোই খালি পেটে খাবেন না খাবার খাওয়ার পর খাবেন। 
  • প্রশ্ন তেতুলের বীজ কিডনি রোগীদের জন্য ভালো?
  • উত্তরঃ কিডনি রোগীদের তেতুলের বীজের পাউডার না খাওয়ায় ভালো। আর যদিও খেতে চান তাহলে খুব অল্প পরিমানে ডাক্তারদের পরামর্শ নিয়ে খেতে পারেন। এই বীজের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ পদার্থ, ফসফরাস, প্রোটিন যা মূলত কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলতে পারে। তাই যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে  তাদের কিডনি সেই চাপ সহ্য করতে নাও পারে। যার কারণে কিডনি রোগীদের ক্ষতির কারণ হতে পারে। 
  • প্রশ্নঃ তেতুলের বীজ কি খাওয়া যায়?
  • উত্তরঃ তেতুলের বিচি অবশ্যই খাওয়া যায়। তবে এটি আপনি কাঁচা খেতে পারবেন না। যদি কাচা খান তাহলে হজম হতে সমস্যা হবে। এটি কি আপনি সিদ্ধ করে অথবা গুরু করে পাউডার হিসেবে খেতে পারেন। আপনি যদি তেতুলের বিচি সঠিক নিয়মে খেতে পারেন তাহলে ভালো উপকার পাবেন।
  • প্রশ্নঃ তেতুলের বীচে কোন ভিটামিন থাকে?
  • উত্তরঃ তেতুলের বীজের পাউডার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি ১, ভিটামিন বি ৩, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি ৬ এর সমস্ত পুষ্টিগুণ গুলো আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এর মধ্যে প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে।
  • প্রশ্নঃ তেতুলের বীজ কি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো?
  • উত্তরঃ তেতুলের বীজ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অবশ্যই ভালো। কারণ এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান। সঠিক নিয়মে তেঁতুলের বীজ খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যা রক্তের মধ্যে শতকরা কমিয়ে থাকে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে।

শেষ কথাঃ তেতুলের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা


আমি আজকে আপনাদেরকে এই আর্টিকেলে আলোচনা করেছি তেঁতুলের বীজের উপকারিতা অপকারিতা ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে তেতুলের বীজের পাউডার তৈরি করবেন কি নিয়ম অনুসারে পাউডার খাবেন তেতুলের বীজের পুষ্টিগুণ উপাদান এবং সবশেষে আপনাদের করা কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি ।

আপনি যদি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমার এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে তেতুলের বিচির সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত একটি ধারণা পেয়ে গেছেন। আমি মনে করি আপনি যদি আমার এই পোস্ট অনুযায়ী তেতুলের বিচির পাউডার তৈরি করে সঠিক নিয়মে সেবন করতে পারেন তাহলে আপনার শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে পারবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

টেকনি টিউব ইনফো'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

কনটেন্ট রাইটার সম্পর্কে

Md. Abir Hossain
Foysal
আমি ফয়সাল, Techne Tube Info.com এর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান কনটেন্ট রাইটার। তথ্য ও প্রযুক্তি, শিক্ষা, চিকিৎসা, লাইফ স্টাইল, অনলাইন ইনকাম নিয়ে লেখালেখিতে আগ্রহী। বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য তথ্যভিত্তিক, সহজবোধ্য ও SEO- সমৃদ্ধ কনটেন্ট তৈরি করাই আমার প্রধান লক্ষ্য। আমি বিশ্বাস করি - জ্ঞানীই ক্ষমতা, তাই নিয়মিত শেখা ও তা ভাগ করে নেওয়ার চেষ্টা করি।